December 28, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, November 17th, 2024, 9:47 pm

জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ফিরিয়ে আনলো ফরিদপুরের ক্রিকেট ইতিহাস

নিজস্ব প্রতিবেদক:

এক সময়ে বৃহত্তর ফরিদপুর ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট চর্চার অন্যতম অঞ্চল। আলিউল ইসলাম, রকিবুল হাসানরা উঠে এসেছেন ফরিদপুর থেকে। জাতীয় ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি জয়ের অতীতও আছে ফরিদপুরের।

১৯৭৮ সালে শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরে ফরিদপুরে একটি দুই দিনের ম্যাচ আয়োজন করে সে সময়ের বিসিসিবি। বিসিসিবি একাদশের বিপক্ষে ২ দিনের সেই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন যারা, তারা সবাই পরবর্তীতে টেস্ট খেলেছেন।

এ এস এম ফারুকের অধিনায়কত্বে বিসিসিবি প্রেসিডেন্ট একাদশে যার খেলেছেন ওই ম্যাচে, তাদের অনেকেই বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ওই ম্যাচে ওয়েটেমুনি -দিলিপ মেন্ডিসের সেঞ্চুরির স্মৃতি জড়িয়ে আছে ফরিদপুর জেলা স্টেডিয়াম।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সফরকারী শ্রীলঙ্কা দলই শুধু নয়, এমসিসি ক্রিকেট দলও ফরিদপুরে পা রেখেছিলো, ম্যাচ খেলেছিলো, বাড়িছিলো ক্রিকেট ক্রেজ।

অথচ, ১৯৯৯ সালে ঢাকা বিভাগ বনাম রাজশাহী বিভাগের মধ্যে তিনদিনের ম্যাচ দিয়ে অভিষিক্ত প্রথম শ্রেণির এই ভেন্যুটি বিসিবির অবহেলার শিকার হয়ে দাঁড়ায়। বৈষম্যের শিকার এই ভেন্যুতে আর পা পড়েনি কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দলের। গত ২৫ বছর এই ভেন্যুতে হয়নি কোনো প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। বিসিবির অযত্ন-অবহেলায় এই ভেন্যুর মাঠ, পিচ হয়ে পড়েছে ক্রিকেটের অনুপযুক্ত।

শনিবার (১৬ নভেম্বর) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজনে ফিরিয়ে এনেছে ফরিদপুরের অতীত সমৃদ্ধ ক্রিকেট ইতিহাস এবং ক্রিকেট ক্রেজ। নিকট ভবিষ্যতে ফরিদপুরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ম্যাচ ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজকরা। ফরিদপুরে একটি মানসম্পন্ন ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণের সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছেন তারা।

শনিবার জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টে ফরিদপুর অঞ্চলের খেলা উদ্বোধণ করতে এসে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক এবং জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক সে পরিকল্পনার কথাই জানিয়েছেন, ‘১৯৭৮ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে এই স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। ১৯৯৯ সালের পর আর কোনো প্রথম শ্রেণির ম্যাচ এখানে হয়নি। আমি এই মাঠে ফুটবল খেলেছি। ভবিষ্যতে আল্লাহ যদি চান, তাহলে ফরিদপুরে ক্রিকেটের জন্য আমরা একটি আধুনিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণ করবো।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক সফল অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন ফরিদপুরে শৈশব কৈশোরে বেড়ে ওঠার স্মৃতির কথা জানিয়েছেন- ‘আমার জন্ম এখানে। আমার বাবার চাকরির সুবাদে আমি এখানেই বড় হয়েছি। আশা করছি এই টুর্নামেন্ট আমাদের ক্রিকেটের পাইপলাইন সমৃদ্ধ করবে।’

জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক ক্রিকেটার জাভেদ ওমর বেলিম গুল্লুর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ক্যারিয়ার সেরা (১৮৮) ইনিংস এই ভেন্যুতে। তাই এই ভেন্যুতে পা রেখে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছেন।

প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জোহারুল হক শাহজাদা মিয়া জিয়া স্মৃতি ক্রিকেটের ফরিদপুর অঞ্চলের খেলা উদ্বোধন করেন। বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সামা ওবায়েদ, জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম বাবু, ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব সৈয়দ বোরহানুল হোসেন পাপ্পু, আয়োজক কমিটির সদস্যবৃন্দ এবং বিএনপির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ফরিদপুর অঞ্চলের প্রতিযোগিতায় ফরিদপুর রেড ৫ উইকেটে ফরিদপুর গ্রিনকে হারিয়ে চূড়ান্ত পর্বে উঠেছে। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ এ ম্যাচে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে মিনহাজুলের ২০ বলে ৩৪ এবং পার্থিবের ২১ বলে ২৮ রানে ভর করে ফরিদপুর গ্রিন ৮ উইকেট হারিয়ে ১৬৭ রানের স্কোর দাঁড় করায়। ফরিদপুর রেড-এর আশিকুল রনি ৩টি (৩/২১) এবং নাজমুল ২টি (২/৩৩) উইকেট পেয়েছেন।

১৬৮ রান তাড়া করতে এসে এক পর্যায়ে স্কোরশিটে ৪৫ উঠতে না উঠতে ৫ উইকেট হারিয়ে যখন বিধ্বস্ত ফরিদপুর রেড, তখন অবিচ্ছিন্ন ৬ষ্ঠ উইকেট জুটির দুই ব্যাটার সেন্টু (৩৬ বলে ৫ চার, ২ ছক্কায় ৫৪*) এবং ইমাম (৪০ বলে ৩ চার, ৭ ছক্কায় ৭২*) ৭০ বলে ১১৪ রান যোগ করলে ৭ বল হাতে রেখে জয়ের উৎসব করে। ফরিদপুর রেড এর ইমাম ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন।

বিএনপির মিডিয়া উইং- এ ম্যাচটি ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করেছে। বেলুন উড়িয়ে এবং জাতীয় সঙ্গীত বাজিয়ে জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফরিদপুর পর্ব উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের আগে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

বিসিবির কিউরেটর শফিউল ইসলাম বেলাল মাত্র দুইদিনে মানসম্পন্ন পিচ এবং আউটফিল্ড প্রস্তুত করে প্রশংসিত হয়েছেন।