June 6, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, May 20th, 2025, 4:47 pm

খুলনা ওয়াসায় পানির মিটার চুরির হিড়িক

মাসুম বিল্লাহ ইমরান, খুলনা ব্যুরো: খুলনা ওয়াসার জোনাল অফিসগুলোতে পানির মিটার চুরির হিড়িক পড়েছে। গত ৬ মাসে তিনটি ভান্ডারে রক্ষিত ২ হাজার ৬২২টি নতুন ও পুড়াতন মিটার চুরির ঘটনা ঘটলেও কর্তৃপক্ষ শুধু মাত্র সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়রি করে দায় সেরেছেন। প্রতিটি চুরির ঘটনা রহস্যজনক হলেও কর্তৃপক্ষ অফিসিয়ালি কোন তদন্ত কমিটি গঠন করেনি। অভিযোগ রয়েছে এই রহস্যজনক চুরির ঘটনার সাথে ওয়াসার কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারি জড়িত। উল্লেখিত চুরি যাওয়া মিটারের দাম কয়েক কোটি টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে গত ১২ মে খুলনা ওয়াসার হাদিস পার্ক সংলগ্ন পুড়াতন অফিসের (বর্তমান ক ও খ জোন) নীচ তলায় ভান্ডার কক্ষে রক্ষিত ১২৯২টি (২০ মি. মি. ও ২৫ মি. মি. ব্যাসের) পুরাতন ও অকেজো পানির মিটার এবং ৬৪ টি দুই ইঞ্চি ব্যাসের নতুন খোলা মিটার রহস্যজনক চুরি হয়।

এঘটনায় পরের দিন ওই জোনাল অফিসের ভান্ডার কর্মকর্তা উপ-সহকারী প্রকৌশলী বিপ্লব মজুমদার খুলনা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (নং-৮৩৪, তারিখ ১৩/০৫/২৫ ইং) করেন। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, ভান্ডার রক্ষক রিজওয়ান চৌধুরি তাকে জানান যে কিছু খোলা মিটার পাওয়া যাচ্ছেনা।

সূত্রটি আরো জানায়, নতুন দুই ইঞ্চি ব্যাসের মিটারের এক একটির দাম ১১ হাজার ৪২৫ টাকা। সে হিসেবে রহস্যজনকভাবে চুরি যাওয়া নতুন ৬৪টি মিটারের দাম ৭ লাখ ৩১ হাজার ২০০ টাকা। পুড়াতন মিটার একটির দাম ৫ হাজার ৭০০ টাকা। ৭৩ লাখ ৬৪ হাজার ৪০০ টাকা।

রহস্যজনক এ চুরির ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে জোনাল অফিসের ভান্ডার কর্মকর্তা উপ-সহকারী প্রকৌশলী বিপ্লব মজুমদার বলেন, অফিসের তিন তলায় ভান্ডার কক্ষের তালা ভাঙ্গার খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে দেখি কোন মালামাল খোয়া যায়নি। পরে নীচতলায় ষ্টোর রুমে গিয়ে দেখি তালা দুমড়ানো, মোচড়ানো। চবি দিয়ে খুলতে না পেরে ভেঙ্গে ফেলি। ভেতরে গিয়ে উল্লেখিত মিটারের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

এঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ওই উপ-প্রকৌশলী বলেন- থানায় জিডি করার পর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য এমডি বরাবর আবেদন করেছি। সেখান থেকে তদন্ত কমিটি হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়- গত ১০ নভেম্বর খালিশপুর চরের হাট জোনাল অফিসের (খ অঞ্চল)  ষ্টোর রুম থেকে রহস্যজনকভাবে ৭৬৬টি পুড়াতন পানির মিটার চুরি যায়। ওই ঘটনায় সহকারী প্রকৌশলী ও আঞ্চলিক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম সরদার খালিশপুর থানায় শুধুমাত্র একটি জিডি করে দায় সারেন। ওই ঘটনায়ও কোন তদন্ত কমিটি গঠন করেনি।  এর একমাস পরেই দৌলতপুর মহেশ^রপাশা জোনাল (ক অঞ্চল) অফিসের ষ্টোর রুম থেকে ৫ শতাধিক পুড়াতন মিটার চুরি যায়। ওই ঘটনায় জোনাল কর্মকর্তা আশিকুর রহমান স্থানীয় থানায় জিডি করেন। ওই ঘটনায়ও ওয়াসা কর্তৃপক্ষ কোন প্রশাসনিক ব্যবস্থা করেনি।

এদিকে জোনাল অফিসগুলোর ষ্টোর রুম থেকে সম্প্রতি চুরির ঘটনা বেড়ে যাওয়া এবং প্রশাসনিক কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কিনা জানতে ওয়াসার সচিব প্রশান্ত কুমার বিশ^াসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- বিষয়টি নিয়ে এমডি হুসাইন শওকত স্যারের সাথে কথা বলুন। আমার কাছে কোন তথ্য নেই।

সম্প্রতি এসব চুরির ঘটনার সাথে জড়িত সিন্ডিকেট প্রধান  হিসেবে সহকারী প্রকৌশলী ও আঞ্চলিক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম সরদারকে দায়ী করে এমডির বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন ওয়াসা খুলনা ওয়াসা কর্মচারী ইউনিয়নের  (রেজিঃ ১৯৮২) নেতৃবৃন্দ। আবেদনে ওই কর্মকর্তার অপসারণ দাবি করা হয়।

জানতে চাইলে খুলনা ওয়াসা কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জিএম আব্দুল গফ্ফার বলেন, খালিশপুর জোনাল অফিসে প্রথম রহস্যজনক  চুরির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় শুধুমাত্র থানায় একটি জিডি দাখিলের মধ্যদিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয়। ওইসময় যদি তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষিদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতো তাহলে প্রতিনিয়ত চুরির নামে মিটার পাচার হতো না। তিনি বলেন, ওয়াসার সচিবের ঢিলেমির কারণে দুস্কৃতি ও লুটপাটকারী পার পেয়ে যাচ্ছে। সচিব সাহেব একটু সিরিয়াস হলে এ ঘটনা ঘটতো না।

চুরির ঘটনায়  কেন তাকে দায়ী করা হচ্ছে জানতে সহকারী প্রকৌশলী ও আঞ্চলিক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম সরদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি ওয়াসার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের বিষয়। সেক্ষেত্রে আমার কোন মন্তব্য নেই।

সাবির্ক বিষয়ে জানতে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হুসাইন শওকতের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। হোয়াট আ্যাপে মেসেজ দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।