পারভেজ আহমেদ, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে রহিমপুর ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি আব্দুর রাহিম রাফির হত্যাকান্ডের ২৪ ঘন্টার মধ্যে খুনিকে সনাক্ত করে আটক করেছে পুলিশ।
সোমবার (১১ আগষ্ট) দুপুরে মৌলভীবাজার পুলিশ সুপারের কার্যালয় জেলা পুলিশ উক্ত হত্যা কাণ্ডের রহস্য উদঘাটন ও আসামীকে আটক করতে সক্ষম হওয়ার বিষয় নিয়ে প্রেসব্রিফিং এর মাধ্যমে ঘটনার বর্ণনা দেন।
উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে হত্যাকান্ডের ঘটনার বক্তব্য দেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অবস)) নোবেল চাকমা। তিনি বলেন, গত শনিবারে কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের সিদ্ধেশ্বরপুর গ্রামে আব্দুর রহিম রাফি (২৪) কে তার আপন ছোট ভাই রানা (ছদ্মনাম) (১৬) তার ভাইকে ঘুমের মধ্যে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে সে।
এসময় তিনি ঘটনার বিস্তারিত তথ্যে বলেন, এই হত্যার নেপথ্যে শুধু টাকা নয়, বহু দিনের ক্ষোভ জমে ছিল। বাবা মারা যাওয়ার পর বড় ভাই অভিভাবকের ভূমিকা পালন করত এবং ছোট ভাইকে মাদ্রাসায় রেখে পড়াশোনা করাতে চাইত। কিন্তু সে পড়াশোনায় অনীহা দেখিয়ে বাড়িতেই বেশি থাকত। এ নিয়ে নিয়মিত শাসন করত বড় ভাই রাফি, যা ছোট ভাই মেনে নিতে পারত না। এছাড়া পারিবারিক অমতে রাফির ভালোবেসে বিয়ে এবং তার পরবর্তী সময়ে মা, ভাই ও ভাবীর মধ্যে চলমান টানাপোড়েন পরিস্থিতিকে আরও বিষাক্ত করে তোলে। সব মিলিয়ে ক্ষোভের আগুন শেষ পর্যন্ত হত্যার মাধ্যমে বিস্ফোরিত হয়।
তিনি আরো বলেন, প্রথমে রানা (ছদ্মনাম) অপরাধ অস্বীকার করলেও পরে অধিক জিজ্ঞাসাবাদে আর ভাইয়ের জানাজায় হাজার হাজার মানুষের সমাগম এবং রাফিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায়ের দৃশ্য দেখে সে অনুশোচনা থেকে হত্যার নৃশংস বর্ণনা দেয়। স্বীকারোক্তিতে জানায়, ঘটনার আগের দিন বড় ভাইয়ের কাছে ৫শত টাকা চাইলে না দিয়ে উল্টো গালিগালাজ করে রাফি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পরদিন সকালে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে খাটের নিচে রাখা ধারালো দা বের করে ঘুমন্ত বড় ভাইয়ের ঘাড়ে উপর্যুপরি কোপ মেরে হত্যা করে। হত্যার পর দা ধুয়ে আবার খাটের নিচে রেখে দেয় এবং নিজের রক্তমাখা লুঙ্গিও সেখানে লুকিয়ে রাখে। এরপর যেন কিছুই হয়নি এমনভাবে স্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে।
উল্লেখ্য, গত ৯ আগস্ট দুপুরে কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের সিদ্ধেশ্বরপুর গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তার এর ছেলে ছাত্রদল নেতা আব্দুর রহিম রাফি (২৪)-এর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) নোবেল চাকমা, শ্রীমঙ্গল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, পুলিশ বুরো ইনভেস্টিগেশন এর পরিদর্শক বিকাশ চন্দ্র দাশ এবং কমলগঞ্জ থানার ওসি আবু জাফর মো. মাহফুজুল কবির ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করেন। গোপন তথ্য, প্রযুক্তি এবং স্থানীয়দের বক্তব্যের ভিত্তিতে পরদিনই নিহতের ছোট ভাইকে আটক করা হয়। এবং তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী খাটের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে হত্যায় ব্যবহৃত দা ও রক্তমাখা লুঙ্গি।
এ ঘটনায় নিহতের মা মনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে কমলগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন (মামলা নং-০৫, ধারা ৩০২/৩৪ পেনাল কোড)।
পারভেজ আহমেদ
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি:
আরও পড়ুন
মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ী রুবেল হত্যার প্রতিবাদে কুলাউড়ায় মানববন্ধন
মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে ভুক্তভোগি দুই নারীর সংবাদ সম্মেলন
শ্রীমঙ্গলে প্রশাসনের আয়োজনে দেশের প্রবীণতম ব্যক্তির জন্মদিন পালন