রাজধানীর যাত্রাবাড়ি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ চতুর্মুখী সমস্যায় জর্জরিত।বিগত ১৯৯৮ সালে ৩৮ শতাংশ জমির উপড় নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু হয় এবং ২০০১ সালে মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত পাঠদান চলছে। শুরু থেকে অদ্যাবধি নানা সময়ে শিক্ষক নিয়োগের কাম্য যোগ্যতা না থাকা, অবৈধ নিয়োগ ও বিধিবহির্ভূত এমপিওভুক্তির অভিযোগসহ আর্থিক বিধিবহির্ভূত হিসাব পরিচালনার মাধ্যমে অর্থআত্মসাত, শিক্ষকদের দলাদলি, বিদ্যালয়কে রাজনৈতিকরন, শিক্ষার্থী কমে যাওয়া সহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সন্ধান পাওয়া গেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে সাবেক অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ ও পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান হাওলাদার এর নামে অভিযোগের সত্যতা মিলছে।এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটিতে আত্মীয় করনের মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্যেরও অভিযোগ রয়েছে। যার কারনে প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় চার গুণ শিক্ষক রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানে। যে কারণে এই বিষয়টি বর্তমানে গোদের উপর বিষফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে। বর্তমানে যাত্রাবাড়ি আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২১৪৩ জন। অন্যদিকে মোট শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ১৮৩ জন। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কোন এমপিও ভুক্ত শিক্ষক না থাকলেও প্রাথমিক স্তর ও মাধ্যমিক স্তরে ৩৯ জন এমপিও ভুক্ত শিক্ষক পাঠদান করছেন।
একটি সূত্র জানায়,২০১৮ সালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান হাওলাদার এর বিরুদ্ধে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিশেষ ক্লাসের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা পায় দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।পরে অতিরিক্ত ফি শিক্ষার্থীদের ফেরত দেয়া হয়।
এছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক তদন্তে তার বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হয়।
সূত্রে আরো জানা যায়, করোনা ভাইরাস মহামারী চলা সময়ে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ প্রতিষ্ঠানের সাড়ে ছয় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে ধরা পড়ে ডিআইএর তদন্তে। এ ঘটনায় তিনি ২০১৭ সালে চাকরিচ্যুত হন।এরপর প্রায় আট বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি।দিনে দিনে যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী কমছে। অন্যদিকে শিক্ষকদের বেতন অনিয়মিত হচ্ছে। বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষকদের ১৩ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। যা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
এই প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, মরিয়ম বেগম।গত ২০০৪ সাল থেকে তিনি সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। গত ২০০৮ সালে যাত্রাবাড়ীতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচনী প্রচারণায় বক্তব্য রাখেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে তাকে বিএনপি ট্যাগ লাগিয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে বিতাড়িত করা হয়। ২০১৩ সালে আদালতে দেয়া রায়ের মাধ্যমে তিনি পুনর্বহাল হন। ২০২০ সালে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান হাওলাদার এডহক কমিটির অগোচরে মনগড়া গভর্নিং কমিটি গঠন করে বিধি বহির্ভূতভাবে ব্যয় করায় অভিযুক্ত হন। এছাড়াও সেই কমিটির মাধ্যমে মনিরুজ্জামান হাওলাদার সহকারি শিক্ষকের পদ থেকে সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। সেই বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা, তদন্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তৎকালীন গভর্নিং বডির সভাপতি ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান হাওলাদার কে অব্যাহতি প্রদান করে মরিয়ম বেগমকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করে। এরপর মনিরুজ্জামান হাওলাদার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করে হেরে যান। এছাড়াও বিধিবহির্ভূত এমপিও ভুক্তির বিষয়ে ১২ জন শিক্ষককে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক চিহ্নিত করা হয়।বিধি বহির্ভূত এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া মনিরুজ্জামান হাওলাদার এবং তার এডহক কমিটির অগোচরে মনগড়া গভর্নিং বডির সদস্যগণ একজোট হয়ে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটানো সহ প্রতিষ্ঠানে বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, অফিস আদালত সহ বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে ভুল তথ্য সরবরাহ করে অপপ্রচার ও প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে।
ক্ষুব্ধ হয়ে পক্ষটি মরিয়ম বেগমের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ করে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) ও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোয় আবেদন করেছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মরিয়ম বেগম জানান,ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকালে যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের স্কুল শাখার পশ্চিম ভবন, স্কুলের মার্কেট ভবন ও কলেজ ভবন সরকারি অধিগ্রহণের আওতায় পরে। এ কারণে সরকার থেকে সেতু ভবনের মাধ্যমে পাঁচ কোটি ৯০ লক্ষ ১৭ হাজার২ শত ৬০ টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ পায় প্রতিষ্ঠানটি। সেই টাকা থেকে শিক্ষক কর্মচারীদের বকেয়া নয় মাসের বেতন ও দুটি উৎসব ভাতা প্রদান করা হয়। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত দুইটি ভবন সংস্কার ও মেরামতের কাজ করা হয়। ১৩ লক্ষ টাকা খরচ করা হয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও একজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর পাঁচ বছরের বরখাস্ত সময়ের বকেয়া বেতন ভাতা বাবদ,
সাবেক অধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এর সময়ের এবং বর্তমান প্রধান শিক্ষক এর সময়ের প্রিন্টিং বিল সহ অন্যান্য বকেয়া টাকা। যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, সেসব বিষয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় তদন্ত করেছে। কিন্তু অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এখন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত চলমান। তাঁর দাবি, আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় বেতন বকেয়া হয়েছে। আগে শিক্ষার্থী বেশি ছিল, তখন বেতন দিতে লাগত প্রায় ১৭ লাখ টাকা। আর এখন শিক্ষার্থী কমেছে। কিন্তু বেতন দিতে লাগছে ২৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। এ জন্যই বকেয়া পড়ছে। আর এই বকেয়া পড়েছে অনেক আগে থেকেই।
স্থানীয়রা জানান একসময় প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থী ছিল প্রায় ৫ হাজার ৮০০ জন। আর কমতে কমতে এখন হয়েছে প্রায় ২ হাজার ১০০। বর্তমানে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন ১৭৩ জন। এর মধ্যে ৩৫ জন এমপিওভুক্ত, মানে সরকার থেকে বেতনের মূল অংশ ও কিছু ভাতা পান। বাকি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন প্রতিষ্ঠানের আয় থেকে দেওয়া হয়। মূলত এসব শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন নিয়েই বেশি সমস্যা হচ্ছে।
আরও পড়ুন
শাহবাগে ছাত্রদল ও শিবির সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি স্লোগান-মিছিল
এক বছরে সাভারে ইউএনওর হাত ধরে স্বপ্নের ছোঁয়া
সাভারে যুব সমাজের উদ্যোগে হোন্ডা ও ফ্রিজ কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৫