October 12, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, September 22nd, 2025, 5:57 pm

অন্ধকারে আলো খোঁজেন যে মানুষটি

সখীপুর (টাঙ্গাইল):

সংবাদদাতা টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার বুড়িচলা গ্রামের ছোট্ট একটি ঘরে বসে বাঁশ চিরে কুলা-ঝু‌ড়ি বানাচ্ছেন ৬৭ বছর বয়সী গণি মিয়া। চোখদুটো শূন্য—১৮ বছর আগে হারিয়েছেন দৃষ্টিশক্তি। পৃথিবীর আলো দেখা বন্ধ হলেও থেমে নেই তার জীবনযুদ্ধ। তিনি আর পৃথিবীর আলো না দেখ‌লেও তবুও হাতের কাজে আলো খুঁজে ফিরেন প্রতিদিন।

গণি মিয়ার পাশে শয্যাশায়ী স্ত্রী হাউসি বেগম, বয়স ৬২। বহু বছর ধরে তিনি প্যারালাইজড। দু’জনেরই জীবন চলছে রোগ-শোক আর দুঃখের ভেতর দিয়ে। অথচ এই দম্পতির সংসারে নেই কোনো উপার্জনক্ষম মানুষ।

দৃষ্টিহীন হয়েও গণি মিয়া ভিক্ষা করতে চাননি কখনো। ১৮ বছর আগে হারিয়েছেন দৃষ্টিশক্তি। পৃথিবীর আলো দেখা বন্ধ হলেও থেমে নেই তার জীবনযুদ্ধ।

-জঙ্গল থেকে বাঁশ কুড়িয়ে আনেন, ইশারায় কেটে চিরে বানান কুলা, টেপারি আর ঝুড়ি। প্রতিদিন আলিশার বাজারে বসে সেগুলো বিক্রি করেন। কাজ করার ফাঁকে গেয়ে ওঠেন ধর্মীয় গজল কিংবা গান—কেউ শোনে, কেউ পাশে বসে থাকে। হয়তো এটুকুই তার বেঁচে থাকার আনন্দ।

দিনশেষে হাতে আসে মাত্র ৭০–৮০ টাকা। সেই টাকায় চলে দুই বুড়ো মানুষের খাবার, ওষুধ আর নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ। সংসারে দুই ছেলে থাকলেও তারা প্রবাসে গিয়ে ভুলে গেছেন বাবা-মায়ের কষ্টের কথা। আর্থিক সহায়তা নেই, খোঁজখবরও নেই নিয়মিত। তবুও অভিমান গোপন করে মেনে নিয়েছেন জীবনের কঠিন বাস্তবতা।

প্রতিবেশী জাকির হোসেন বললেন—

‘গণি ভাই অনেক পরিশ্রমী মানুষ। চোখে দেখতে পান না, কিন্তু মনের চোখে আলো খুঁজে পান। কখনো কারো কাছে হাত পাতেন না। বাঁশ কেটে কুলা বানিয়ে বাজারে বিক্রি করেই সংসার চালান। তবে স্ত্রী অসুস্থ থাকায় কষ্টটা বেড়েছে অনেক।’

এলাকাবাসী মাঝে মাঝে সাহায্যের হাত বাড়ালেও তা যথেষ্ট নয়। সামান্য সরকারি সহযোগিতা কিংবা কোনো বিত্তবান মানুষের সহায়তা পেলেই হয়তো এই দম্পতির জীবনে একটু স্বস্তি ফিরতে পারে।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মনসুর আহমেদ জানান, ‘গণি মিয়াকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। তার মতো দৃষ্টিহীন মানুষ এত কষ্টের মধ্যেও হস্তশিল্প তৈরি করছেন—এটি নিঃসন্দেহে অনুকরণীয় উদাহরণ।’