জেলা প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমির পরিবর্তে জেল খাটা নিরপরাধ মিনুকে মুক্তি দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি মূল আসামি কুলসুমকে দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে কুলসুমের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে যারা হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেছেন সেই আইনজীবী ও তদবিরকারীদের তলব করেছেন আদালত। আগামী ২৮ জুন হাইকোর্টে হাজির হয়ে এ বিষয়ে উপযুক্ত ব্যাখ্যাসহ জবাব দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মিনুর জেল খাটার বিষয়ে শুনানি নিয়ে সোমবার (৭ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে মিনুর পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ।
শুনানিতে জেলে থাকা নিরপরাধ মিনুর পুরো ঘটনা তুলে ধরে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘বিগত দুই বছরে আমাদের দেশে এমন ২৬টি ঘটনা ঘটেছে। একজনের নামে আরেকজন জেলে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘আসল আসামি শনাক্তে অনেক পদ্ধতি আছে। এ বিষয়ে আমি আরও লিখিতভাবে আদালতকে জানাব।’
মিনুর ঘটনার পেছনে একটি চক্র কাজ করছে সেটি তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনা দাবি করেন এই আইনজীবী।
আদালত বলেন, ‘আমরা মনে করি এভাবে যদি রিয়েল (আসল) কালপ্রিট (দোষী) অর্থের বিনিময়ে হোক, অথবা বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে নিজেকে বাঁচিয়ে অন্য নিরপরাধ লোককে জেলের মধ্যে আটক রাখে সেটা দুর্ভাগ্যজনক।’
এদিকে শুনানির সময় আইনজীবী শিশির মনিরের সঙ্গে একমত পোষণ করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ড. বশির উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমরাও চাই দোষীদের শাস্তি হোক, নিরপরাধ কেউ যাতে জেলে না থাকে।’
হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তারের হয়ে জেল খাটা মিনুর বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী শিশির মনির।
তার আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আইনজীবীকে এফিডেভিট দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এরপর আদালতের এখতিয়ার পরিবর্তন হওয়ার বিষয়টি বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানির জন্য আসে।
হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন দ- পাওয়া আসামির বদলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে দুই বছর ৯ মাস ধরে জেল খাটছেন মিনু। এ ঘটনা জানাজানি হলে মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানোর নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ।
চট্টগ্রামে হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কুলসুমের পরিবর্তে মিনুর সাজা খাটার ঘটনায় মামলার নথি হাইকোর্টে আসে ২৪ মার্চ।
কারা কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মিনুকে আদালতে হাজির করা হলে নতুন করে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। সেই সঙ্গে মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক শরীফুল আলম ভূঁঞা। পরে নথি একদিনের মধ্যেই হাইকোর্টে আসে।
কারাগারে বালাম বই খুঁজতে গিয়ে বিষয়টি উঠে আসে। এরপর বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন চট্টগ্রামের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, আদালতে হাজির হয়ে তিন সন্তানের জননী মিনু তার জবানবন্দিতে জানান, সময়টি ছিল ২০১৮ সালের রমজান মাস। ইফতারি দেয়ার কথা বলে কুলসুম ও মর্জিনা নামের দুজন আদালতে মিনুকে নিয়ে যান। মিনুকে বলা হয়েছিল ‘কুলসুম’ নাম ডাকা হলে তিনি (মিনু) যেন হাত তোলেন। সে অনুযায়ী হাত তোলার পর কর্তৃপক্ষ তাকে ‘কুলসুম’ হিসেবে চিহ্নিত করে কারাগারে পাঠায়। মিনুকে এভাবে কৌশলে অপরাধী সাজানো কুলসুম একটি হত্যা মামলার আসামি।
২০০৬ সালের জুলাইয়ে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানার রহমতগঞ্জ এলাকায় একটি আমগাছে ঝুলন্ত অবস্থায় পারভীন নামের এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তদন্তে বেরিয়ে আসে, পারভীনকে শ্বাসরোধে হত্যা করে আত্মহত্যা হিসেবে প্রচারের জন্য গাছে ঝুলিয়ে রাখেন কুলসুম। ২০০৭ সালের ২৬ অক্টোবর কুলসুমকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এক বছর তিন মাস পর তিনি জামিনে মুক্তি পান।
২০১৭ সালে মামলার রায় ঘোষণা করেন তখনকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক নুরুল ইসলাম। তাতে কুলসুমকে যাবজ্জীবন কারাদ-সহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদ- দেয়া হয়। সে সময় কুলসুম পলাতক ছিলেন।
পরে আইনজীবী নাছির উদ্দীনের মাধ্যমে ২০১৮ সালের জুনে কুলসুম আত্মসমর্পণ করতে চান। আত্মসমর্পণের দিনই মিনুকে কুলসুম হিসেবে সাজিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। তখন থেকেই কারাগারে মিনু।
আরও পড়ুন
রংপুরে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন মহানগর ও জেলা শাখার দ্বিবার্ষিক সম্মেলন
র্যাব রংপুরে ৩৫১.৩৮ গ্রাম হেরোইন সহ স্বামী-স্ত্রী আটক করেছে
দুর্নীতির ফাইল নষ্ট করতেই সচিবালয়ে আগুন: রংপুরে রিজভী