নিজস্ব প্রতিবেদক:
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল দেশের অন্যতম একটি মেগা প্রকল্প। কিন্তু ওই প্রকল্পের লাইটিংয়ের জন্য আমদানি করা হয়েছে নিম্নমানের বাতি। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) পুরো বিমানবন্দরের আলোকসজ্জায় জার্মানি ব্র্যান্ডের ফিলিপস বাতি লাগানোর অনুমোদন দিলেও ঠিকাদার আমদানি করছে কোরিয়ান ব্র্যান্ড মালদানি বাতি। ইতোমধ্যে কার্গো কমপ্লেক্সের জন্য বেশ কিছু বাতি আমদানিও হয়ে গেছে। অথচ বিশ্বের কোনো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই মালদানি বাতি ব্যবহারের রেকর্ড নেই। সেখানে অতিরিক্ত মুনাফা করার জন্য ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি) নিম্নমানের ওই বাতি লাগাচ্ছে। ওসব বাতি লাগানোর জন্য যেসব সুইচ আমদানি করা হয়েছে সেগুলোর মান নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের আদলে থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পটি তৈরির প্রক্রিয়াটিও হোঁচট খেতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। বসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, থার্ড টামির্নাল প্রপ্রকল্পের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এলএস নামের একটি কোম্পানির যে ক্যাবল আমদানি করা হয়েছে তার জন্য বেবিচককে ৫৮.৬০ শতাংশ ট্যাক্স-ভ্যাট দিতে হচ্ছে। ফলে শুধুমাত্র ক্যাবলের মূল্য আর ট্যাক্স-ভ্যাট যোগ করা হলে দেশীয় ক্যাবলের চেয়ে আরো অনেক বেশি দাম পড়বে। তার পরও সিন্ডিকেট বিদেশ থেকে মালামাল ক্রয়ে বেশি আগ্রহী। মূলত দুর্নীতি ও কমিশন বাণিজ্য করার জন্যই ঠিকাদার বিদেশ থেকে আমদানিতে বেশি ঝুঁকছে। তবে সব কিছু যাচাই-বাছাই ও মনিটরিং শুরু করেছে দুদক।
সূত্র জানায়, শাহজালালের কার্গো টার্মিনালে ইতোমধ্যে কোরিয়ান মালদানি ব্র্যান্ডের লাইটিং বাতি লাগানো শুরু করেছে ঠিকাদার। আর দেশে মালদানির কোনো ডিলার কিংবা লোকাল এজেন্ট নেই। ফলে বাতি নষ্ট হলে সেগুলোর মেরামত ও ওয়ারেন্টির কোনো ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া মালদানি বাতিতে আলোও কম হয়। অভিযোগ রয়েছে, বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একজন প্রভাবশালী সদস্য ও ঠিকাদারের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে একটি সিন্ডিকেট এমন ধরনের কর্মকা- চালানোর সুযোগ পাচ্ছে। তাছাড়া সংরক্ষিত মহিলা আসনের একজন এমপিও ওই সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য। ওই প্রভাবশালীরা প্রভাব খাটিয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরসহ দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে একাধিক প্রকল্প হাতিয়ে নিয়েছেন। আর ওসব প্রকল্পেও নিম্নমানের কাজ হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু দলীয় প্রভাব থাকায় কেউ কোনো ধরনের টুঁ শব্দ করতে পারছে না বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ। মূলত প্রকল্পের চুক্তিতে বাধ্যবাধকতা থাকায় কোরিয়া থেকে মালদানি বাতি আমদানি করার সুযোগ পাচ্ছে ঠিকাদার। অথচ মালদানি বাতি থেকে জার্মানির তৈরি ফিলিপস বাতির দাম ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বেশি। কিন্তু অনেক বেশি উন্নতমানের ও অত্যাধুনিক। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দুদক ইতোমধ্যে থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের তালিকা, ব্র্যান্ড ও সেগুলো কোন দেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে তা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চেয়েছে। দেশে ভালো মানের পণ্য থাকার পরও বিদেশ থেকে উচ্চ শুল্কে আমদানি করা পণ্যের তালিকাও চেয়েছে দুদক।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান জানান, থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পে ব্যবহৃত পণ্যের মান নিয়ে কোনো আপোশ করা হবে না। বেবিচক থেকে যে মানদ- নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে তাই করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ ইকুইপমেন্ট অবশ্যই ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ড হতে হবে। দেশীয় কোম্পানির আন্তর্জাতিক মানের পণ্য থাকলে তার আমদানি নিরুৎসাহিত করা হবে। কোনো ধরনের সিন্ডিকেটই এই প্রকল্পে থাকতে পারবে না। প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতিকে জিরো টলারেন্স হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
সরকারের সংস্কার এজেন্ডা সমর্থন করছে ইআইবি
এই সরকারের স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার ম্যান্ডেট নেই: বিএনপি
রংপুর পুলিশের পৃথক দুটি অভিযানে মাদকসহ আটক-৩, ধর্ষক গ্রেফতার করেছে র্যার ১৩