অনলাইন ডেস্ক :
দেরিতে হলেও শুরু হয়েছে বিশ্বের ক্রীড়াবিদদের সেরা আসর অলিম্পিক গেমস। এবারের টোকিও অলিম্পিকের আমেজ বিগত সকল আসরের তুলনায় একেবারেই ভিন্ন।
২০২০ সালে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল টোকিও অলিম্পিকের। কিন্তু করোনার কারণে গত বছর আয়োজন স্থগিত করে ২০২১ সালের জন্য পুনরায় তারিখ নির্ধারণ কর হয়।
বিশ্বজুড়ে করোনা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি না হওয়ায় এবারের অলিম্পিক গেমসে ক্রীড়াবিদরা তাদের দক্ষতার প্রদর্শন করছেন প্রায় শূণ্য গ্যালারিতেই। যেখানে নেই প্রিয়জন বা সমর্থকদের উচ্ছ্বাস ভরা সমর্থন প্রকাশের চিৎকার। এবারের আসরে খেলোয়াড়রা মনোবল বাড়াতে নিজেদের মতো করেই পথ খুঁজে নিচ্ছেন।
মার্কিন জিমন্যাস্ট স্যাম মিকুলাক প্যারালাল বার থেকে লাফিয়ে পড়ে ভূমি স্পর্শ করেই ক্যামেরার দিকে তার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তার অবতরণের সাথে সাথেই টিভি সম্প্রচারক বলে উঠলেন, ‘অসাধারণ! চমৎকার, এটা অত্যন্ত দারুণ ছিল!’
মিকুলাক জানেন, গ্যালারি শূণ্য হলেও বিশ্বজুড়ে বহু মানুষ টেলিভিশন (টিভি) সেটের সামনে তার নিপুণ ক্রীড়া কৌশল দেখার জন্য অপেক্ষায়া আছে। কিন্তু তার সামনে কাঠের চেয়ারগুলোতে দর্শক সাড়িতে অসংখ্য মানুষের উচ্ছ্বাস ভরা চিৎকার শোনার কথা ছিল। দর্শকদের অভিব্যক্তিই যেন খেলোয়াড়দের উদ্দীপনার চাবিকাঠি। কিন্তু এবার তেমনটা নেই।
বরং মার্কিন পুরুষ দলকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য গ্যালারির এক কোণায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে দেখা যায় মার্কিন নারী দলের খেলোয়াড়দের। তাদের এই উচ্ছ্বাসই মিকুলাকের জন্য অনেক বড় পাওয়া। ঠিক একইভাবে পরের দিন আমেরিকার নারী দলের প্রতিযোগিতার সময়, পুরুষ খেলোয়াড়রা আগের দিনের মতো সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ তাদের সতীর্থদের উদ্দীপনা ও সাহস যোগাতে চেষ্টা করেছেন।
টোকিও অলিম্পিকে এভাবেই অন্যান্য দেশের খেলোয়াড়রা তাদের সতীর্থদে সমর্থন যুগিয়ে চলেছেন। পাশাপাশি তারা জানেন, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাদের সমর্থকরা একইরকম ভাবে টিভি সেট বা কম্পিউটারের সামনে বসে তাদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন।
খেলায় সফলতা পেলে এই নীরব গ্যালারিতেও প্রশান্তি পাওয়া যায়। কিন্তু আশাতীত সাফল্য না পেলে, ২৫০ মিটার দৌঁড়ের শেষ প্রান্তে সঠিক সময়ে পৌঁছাতে না পারলে, শারীরিক যন্ত্রণার সাথে মানসিক অবসাদও ঘিরে ধরে এই ফাকা গ্যালারিতে।
জাপানি জিমন্যাস্ট মাই মুরাকামি জানান, তার জন্য টোকিও অলিম্পিক ছিল অনেক বেশি রোমাঞ্চকর। কারণ তার দেশেই হচ্ছে এবারের অলিম্পিক। কিন্তু হতাশার বিষয় এই করোনা পরিস্থিতির কারণে তার দেশের মানুষও সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারছেন না। এমন গ্যালারি শূণ্য অলিম্পিক তার জন্য প্রথম অভিজ্ঞতা।
ব্রাজিলিয়ান ভলিবল খেলোয়াড় আগাথা বেদনারজুক, গত ব্রাজিল অলিম্পিকে নিজ দেশের মাটিতেই রৌপ্য পদক জয় করেছিলেন। তিনি বলেন, এমন জনমানবহীন অলিম্পিক তার মধ্যে অন্যরকম অনুভূতি জাগাচ্ছে।
আগাথা বলেন, ‘ব্রাজিলে আমার জন্য আমার দেশের মানুষসহ আরও সমর্থকদের প্রকাশ্য সমর্থন ছিল। সেই সমর্থন আর উচ্ছ্বাস আমাকে মানসিক প্রশান্তির পাশাপাশি সাহস বাড়িয়েছে। কিন্তু এবার নিজের মনোবল বাড়ানোর দায়িত্বটা একাই সামলাতে হচ্ছে।’
তবে গ্রিসের ওয়াটার পোলো খেলোয়াড় ইম্যানুয়েল জেরদেভাস এবারের অলিম্পিক নিয়ে খুব আশাবাদী। তার মতে, এবারের ব্যতিক্রমী অলিম্পিকের আসর নিজেই একটি প্রেরণার উৎস।
তিনি বলেন, ‘এবারের অন্যরকম আসরই ক্রীড়াবীদদের মনোবল বাড়াতে যথেষ্ঠ। যদিও এটা আমার প্রথম অলিম্পিক, তবে এই আসরে থাকতে পেরেই আমি খুব আনন্দিত।’
আরও পড়ুন
মৌসুমসেরা ফুটবলারদের বাফুফের পুরস্কার
২৯ স্ট্রাইকরেট, ৩৩ গড়, নেই কোনো ছক্কা—ভারতীয় দলে এই খেলোয়াড় না থাকাতেই খুশি হ্যাজলউড
শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় ক্রীড়াঙ্গনে জাকারিয়া পিন্টুর শেষ বিদায়