নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে নার্সিং শিক্ষায় শিক্ষার্থী ও ইনস্টিটিউটের সংখ্যা বাড়লেও মান নিশ্চিত হচ্ছে না। নার্সিং শিক্ষার প্রসারে বিগত কয়েক বছরে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ সময়ে সরকারি উদ্যোগে নতুন নার্সিং ইনস্টিটিউটের পাশাপাশি সাড়ে তিনশর বেশি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্যানুযায়ী গত পাঁচ বছরে দেশে নার্সিং ইনস্টিটিউট বেড়েছে ছয় গুণ আর শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে নয় গুণেরও বেশি। পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ।
কিন্তু নার্সিং শিক্ষায় ঢালাওভাবে প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন ও শিক্ষার্থী বাড়লেও শিক্ষার মান নিশ্চিত করা হচ্ছে না। বর্তমানে দেশে সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউট রয়েছে ৬৮টি আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৬০। গত পাঁচ বছরের শিক্ষা পরিসংখ্যানের তথ্যে দেখা যায় ২০১৮ সালে নার্সিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল ৭১টি, শিক্ষার্থী ৪ হাজার ৪২৬ এবং শিক্ষক ছিলেন ১ হাজার ৪৮১ জন।
২০১৯ সালে নার্সিং ইনস্টিটিউট ১০৯টি, শিক্ষার্থী ২৩ হাজার ১২৫ এবং শিক্ষক ১ হাজার ৪৮১ জন। ২০২০ সালে নার্সিং ইনস্টিটিউট ৩৬১টি, শিক্ষার্থী ৪৭ হাজার ৫৬৭ এবং শিক্ষক ২ হাজার ৭১৪ জন। ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠান ৪২৮টি, শিক্ষার্থী ৬০ হাজার ৫৩৯ এবং শিক্ষক ৩ হাজার ১৫০ জন। সর্বশেষ ২০২২ সালে নার্সিং ইনস্টিটিউটের সংখ্যা আগের বছরের অপরিবর্তিত ৪২৮টি, শিক্ষার্থী ৪২ হাজার ৪১০ এবং শিক্ষকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৫০। স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত পাঁচ বছরে দেশে নার্সিং প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়লেও তুলনামূলকভাবে শিক্ষার মান ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি। এ সময়ে আনুপাতিক হারে শিক্ষকের সংখ্যা কম বেড়েছে। ব্যানবেইসের শিক্ষা পরিসংখ্যানের তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে নার্সিং ইনস্টিটিউটগুলোয় তিনজন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক ছিলেন, ২০২২ সালে এসে ১৩ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক রয়েছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রশিক্ষণের মান ভালো হলেই সেবা ভালো হবে।
দেশে নার্সিং শিক্ষার মান নিশ্চিতে একটি নীতিমালা রয়েছে। সেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আদর্শ মান, ল্যাব সুবিধা এবং প্র্যাকটিসের জন্য হাসপাতাল নিশ্চিতের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু দেশের অধিকাংশ বেসরকারি নার্সিং কলেজ এ নীতিমালা মানছে না। ফলে নার্সিং শিক্ষার মান নষ্ট হচ্ছে। সেই সঙ্গে সেবার মান নিয়েও সংশয় তৈরি হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বিগত ২০১৫ সালে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নার্সিং শিক্ষার মান নিশ্চিতে সরকার ‘বেসরকারি পর্যায়ে নার্সিং কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করার নীতিমালা’ নামে একটি বিধি পাস করে। নীতিমালায় বেশকিছু শর্ত রয়েছে। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে ল্যাব কোর্সে আটজন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক থাকবেন একজন, পর্যাপ্ত ক্লাসরুম ও ল্যাব সুবিধা নিশ্চিত, প্র্যাকটিসের জন্য নূন্যতম ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নিজস্ব হাসপাতাল থাকতে হবে।
প্রাথমিক পর্যায়ে নিজস্ব হাসপাতাল না থাকলে নূন্যতম ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি থাকতে হবে। তবে দেশের প্রায় অর্ধেকের বেশি বেসরকারি নার্সিং প্রতিষ্ঠানে এসব শর্ত মানা হচ্ছে না। নীতিমালায় সর্বোচ্চ এক-চতুর্থাংশ খ-কালীন শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ রাখা হলেও ওসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই খ-কালীন শিক্ষকনির্ভর। ফলে অধিকাংশ বেসরকারি নার্সিং প্রতিষ্ঠান শিক্ষার যথাযথ মান নিশ্চিত করতে পারছে না। তারা কম ব্যয় করে অধিক লাভ করতে চায়।
এ কারণে নীতিমালায় যেসব শর্ত রয়েছে তার অধিকাংশই বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আর সরকারের পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে যে পরিমাণ তদারকি প্রয়োজন সেটিও করা হয় না। আর তদারকি না থাকায় সুযোগ নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর মান উন্নয়নহীন শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এ ধরনের কর্মকান্ডের কারণে বেসরকারি নার্সিং শিক্ষার প্রতি মানুষের এক ধরনের অনাস্থা তৈরি হয়েছে।
এদিকে নার্সি শিক্ষার মান প্রসঙ্গে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাকসুরা নূর জানান, ফিলিপাইনসহ বেশ কয়েকটি দেশের কারিকুলাম পর্যালোচনা করে দেশের কারিকুলামের উন্নয়ন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ শিক্ষার মান আরো বাড়বে। বেসরকারি ইনস্টিটিউটগুলো আমাদের মনিটরিংয়ের দায়িত্বে নেই। এসব প্রতিষ্ঠান মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে যে পরিমাণ জনবল দরকার, তা আমাদের নেই। তবে বেসরকারি ইনস্টিটিউটগুলোর মান নিয়ে কিছু প্রশ্ন রয়েছে। তাই সরকারের পক্ষ থেকে এ ইনস্টিটিউটগুলোকেও মনিটরিংয়ের আওতায় আনার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন
কোরআনের বর্ণনায় বুদ্ধিমানের ৭ বৈশিষ্ট্য
একটা ধাক্কায় কোহলির ৪ লাখ টাকা জরিমানা
মানুষের মস্তিষ্ক কতটা দ্রুত কাজ করে