সদরুল হাসান- রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (আরএনপিপি) আগামী বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রোসাটমের কাছ থেকে ইউরেনিয়ামের নতুন ব্যাচ গ্রহণ করতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছে সরকারি সূত্র।
সূত্র জানায়, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি কর্পোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ আনুষ্ঠানিকভাবে রূপপুর প্রকল্পে কর্তৃপক্ষের কাছে জ্বালানি হস্তান্তর করবেন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দেবেন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আলী হোসেন বলেন, গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনি সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘ঐতিহাসিক এই মুহূর্ত উপলক্ষে আমরা প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’
এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের পারমাণবিক জ্বালানি ইউরেনিয়ামের প্রথম ব্যাচ বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়।
রাশিয়া থেকে একটি বিশেষ এয়ার কার্গোর মাধ্যমে ইউরেনিয়ামের চালানটি ঢাকায় এসে পৌঁছায় এবং পরদিন কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে সড়কপথে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দে নিয়ে যাওয়া হয়।
রাশিয়ার একটি কারখানা থেকে একটি বিশেষ বিমানে করে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পারমাণবিক জ্বালানি আনা হয়।
রাশিয়ার নভোসিবির্স্ক কেমিক্যাল কনসেনট্রেটস প্ল্যান্টে (এনসিসিপি) এই জ্বালানি উৎপাদিত হয়। এটি রোসাটমের জ্বালানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তেভেলের সহায়ক প্রতিষ্ঠান।
দুই ইউনিট বিশিষ্ট ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রোসাটম।
এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের পারমাণবিক চুল্লিটি ২০২১ সালের অক্টোবরে স্থাপন করা হয়েছিল এবং দ্বিতীয় ইউনিটের জন্য রিয়্যাক্টরটি ২০২২ সালের অক্টোবরে স্থাপন করা হয়েছিল।
সরকার ২০০৯ সালে আরএনপিপি প্রকল্প স্থাপনের পরিকল্পনা করে এবং ২০০৯ সালের ১৩ মে রাশিয়ার সঙ্গে “পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার” বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে।
২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রস্তুতিমূলক পর্যায়ে নির্মাণকাজ সম্পাদনের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলারের রাষ্ট্রীয় রপ্তানি ঋণসংক্রান্ত একটি চুক্তি সই হয়।
রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ২০১৫ সালে রাশিয়ার সঙ্গে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারের সাধারণ চুক্তি (জিসি) করে সরকার।
বাংলাদেশ ২০১৬ সালের জুলাই মাসে আরএনপিপির জন্য ১১ দশমিক ৩৮৫ বিলিয়ন ডলারের রাশিয়ান ঋণ পাওয়ার জন্য দেশটির সঙ্গে একটি ক্রেডিট চুক্তি সই করে। প্রকল্পের ব্যয়ের ৯০ শতাংশ এই ঋণ থেকে আসা।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্প্রতি জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই প্ল্যান্টের প্রথম ইউনিট এবং ২০২৫ সালের জুলাইয়ে দ্বিতীয় ইউনিট চালু হতে পারে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. এম শওকত আকবর বলেন, আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে আরএনপিপির প্রথম ইউনিট এবং ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে দ্বিতীয় ইউনিট চালু হবে বলে আশা করছে সরকার।
রূপপুরে ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের উৎপাদন আগামী বছর থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বিদ্যুৎ বিভাগ ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এখনো বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্ভাব্য শুল্ক নিয়ে অন্ধকারে রয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্ভাব্য বিদ্যুতের দাম নিয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের (বিএইসি) সঙ্গে বিপিডিপির কর্মকর্তারা বেশ কয়েকবার বৈঠক করলেও তারা এ বিষয়ে স্পষ্ট চিত্র পাননি।
বিএইসি আরএনপিপি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে এবং বিপিডিবি একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় রাশিয়ার সহায়তায় প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ কিনবে।
তবে বিপিডিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিএইসি’র সঙ্গে আলোচনা ও সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তারা প্রাথমিক হিসাব করেছেন এবং আরএনপিপির প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ১০ টাকার কম হবে না।
কিছু স্থানীয় বিশেষজ্ঞের গণনা অনুসারে আরএনপিপি প্রকল্পের বিদ্যুতের শুল্ক শূন্য দশমিক শূন্য ৮ থেকে শূন্য দশমিক ১০ ডলার (৮-১০ সেন্ট) অতিক্রম করবে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সাবেক সদস্য ও দেশের অন্যতম বিদ্যুৎ শুল্ক বিশেষজ্ঞ মিজানুর রহমান বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বিদ্যুতের দাম হবে ০.০৮৫ ডলারের (৮.৫ সেন্ট) বেশি।
—–ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোর মামলায় কনস্টেবল মুকুল কারাগারে
শীতে শিশুদের সুস্থ রাখবে যেসব খাবার
দীর্ঘদিন পর ফেরা তারকারা