নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের কারাগারগুলোতে বন্দির সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। মূলত বিচারে দীর্ঘসূত্রতায় বন্দির সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে প্রায় সব কারাগারেই বন্দির সংখ্যা ধারণক্ষমতার চেয়ে প্রায় দুই থেকে তিন গুণ বেশি। তাতে একদিকে যেমন বন্দিদের থাকা-খাওয়ার কষ্ট বাড়ছে, অন্যদিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা পেতেও প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আর কারা কর্তৃপক্ষকে অতিরিক্ত বন্দির চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। খাবারসহ অন্যান্য খাতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি ব্যয়। বর্তমানে প্রায় ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ বন্দি বিচারের অপেক্ষায় আটক রয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের ৫৫টি জেলা কারাগার এবং ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগারে ৪২ হাজার ৬২৬ বন্দির ধারণক্ষমতা রয়েছে। এর বিপরীতে বন্দির সংখ্যা ৭৭ হাজার ২০৩ জন, যেখানে নারী হার ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। সব মিলিয়ে ধারণক্ষমতার ১৯০ দশমিক ৪ শতাংশ বন্দি রয়েছেন দেশের কারাগারগুলোয়। মিথ্যা ও গায়েবি মামলার কারণে দেশের কারাগারগুলোয় বিচারের অপেক্ষাধীন বন্দির সংখ্যা বাড়ছে। কারাগারগুলোতে সাজাপ্রাপ্ত বন্দির সংখ্যা ২০ শতাংশেরও কম। বাকি ৮০ ভাগই বিচারের অপেক্ষায় কারাগারে আটক। সূত্র জানায়, কারাগারগুলোয় অনেক বন্দি রয়েছেন, যাদের আইনি সেবা পাওয়ার সামর্থ্য নেই। ফলে দিনের পর দিন তাদের কারাগারেই কাটাতে হচ্ছে।
ওসব বন্দিকে খুঁজে বের করে প্রয়োজনী আইনি সেবা নিশ্চিত করা জরুরি। এ ছাড়া কোনো বন্দি বিনা কারণে কারাগারে রয়েছেন কিনা, কারা কর্তৃপক্ষকে তা নিয়মিত যাচাই করে দেখা প্রয়োজন। তবে সবকিছুর আগে বন্দির জন্য বিচার প্রক্রিয়াকে সহজ করা জরুরি। জুডিশিয়াল ব্যবস্থায় বিচারের অপেক্ষায় থাকা বন্দিদের বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার মধ্য দিয়ে কারাগারগুলো থেকে এ ধরনের বন্দি কমিয়ে আনা সম্ভব। বিদ্যমান অবস্থায় বিচারের অপেক্ষাধীন থাকা একজন বন্দিকে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের সঙ্গে মিশতে হয়। এতে করে সেই বন্দির ওপর এক ধরনের শারীরিক ও মানসিক প্রভাব পড়তে শুরু করে। অপরাধীদের সঙ্গে থাকতে থাকতে একটা সময় তার মধ্যেও অপরাধপ্রবণতা তৈরি হয়।
কারণ দেশের কারাগারগুলো এখনো সংশোধনাগার হিসেবে তৈরি হতে পারেনি। এদিকে বিশেষজ্ঞরা দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শুরুর মাধ্যমে দেশের বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা কমিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছেন। তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, বিচারের অপেক্ষাধীন বন্দি কমিয়ে আনতে আইনি সেবা দেয়া ছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বেশকিছু উদ্যোগ রয়েছে। দেশের কারাগারে বর্তমানে বন্দি রয়েছেন ৭৭ হাজারের মতো। এর মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত বন্দি ১৯ হাজার ৫০০। বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন ৫৭ হাজার ৭০০ বন্দি। এসব বন্দির বিষয়ে প্রতিটি জেলায় সরকারি পর্যায়ে কমিটি রয়েছে। বন্দিদের মধ্যে যাদের আইনি সহায়তার প্রয়োজন, তাদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় সেবা দেয়া হয়। এজন্য প্রত্যেক জেলের সুপারকে নির্দেশনাও দেয়া রয়েছে।
তারা নিয়মিত বিষয়টি জেলা কমিটিকে রিপোর্ট করেন। তার ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হয়। এ ছাড়া কিছু বেসরকারি সংস্থাও বন্দিদের আইনি পরামর্শের জন্য কাজ করে থাকে। অন্যদিকে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দির খাবারের সংকুলান করতে গিয়ে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের তথ্য কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তাদের হিসাবে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রয়োজনের তুলনায় কারাগারে খাদ্যদ্রব্য বাবদ ৬ কোটি ১১ লাখ ২৩ হাজার ৯ টাকা বেশি ব্যয় করা হয়েছে। নিরীক্ষাকালে বিল ভাউচার, বিল রেজিস্টার, কারাবন্দির সংখ্যা, তাদের দৈনিক মিল হার পর্যালোচনা করে এ তথ্য তুলে এনেছে সরকারি এ নিরীক্ষা সংস্থাটি।
এ বিষয়ে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএসএম আনিসুল হক জানান, বন্দিদের খাবারের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণের কোনো অর্থ বেঁধে দেয়া হয় না। কেবল তাদের খাবারের বরাদ্দ ও পরিমাণ বেঁধে দেয়া হয়। সে অনুযায়ীই বন্দিদের খাবার সরবরাহ করা হয়। আর জেলকোড অনুযায়ী একজন বন্দির জন্য ৩৬ বর্গফুট জায়গা বরাদ্দ থাকে। কিন্তু আমাদের বন্দিরা এ জায়গা পেয়ে থাকে শুধু রাতে ঘুমানোর জন্য। সেলের বাইরে দেশের কারাগারগুলোয় যথেষ্ট জায়গা রয়েছে। বন্দিরা তাদের বরাদ্দের চেয়েও বেশি জায়গা ব্যবহারের সুযোগ পান।
আরও পড়ুন
মাল্টার নাগরিকত্ব চেয়েও পাননি তারিক সিদ্দিকের স্ত্রী-মেয়ে
কাতারের আমিরকে ধন্যবাদ দিয়ে যা বললেন তারেক রহমান
শীতের সবজির বাজারে স্বস্তি, কমেছে পেঁয়াজ,ডিম-মুরগির দামও