September 13, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, September 13th, 2025, 5:17 pm

টাঙ্গাইলে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ১৫৫ বছরের ঐতিহাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান — ‘সন্তোষ জাহ্নবী উচ্চ বিদ্যালয়’

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:

সময় থেমে থাকে না, কিন্তু কিছু কিছু স্থাপনা ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তেমনি একটি নাম ‘সন্তোষ জাহ্নবী উচ্চ বিদ্যালয়’। ১৮৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত, ১৫৫ বছরের পুরনো এই ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে অপেক্ষা করছে পুনর্জন্মের।

টাঙ্গাইল শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বিদ্যালয়টি শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি স্থাপত্যকীর্তিও। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শৈলীতে নির্মিত এ ভবনের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০০ ফুট, দেয়ালের পুরুত্ব ২২ ইঞ্চি, আর ছাদের উচ্চতা ২২ ফুটের মতো। সবচেয়ে অনন্য যে বৈশিষ্ট্য—এ বিদ্যালয়ের নকশায় নেই কোনো জানালা; প্রতিটি জানালাই রূপান্তরিত হয়েছে দরজায়। ১০১টি দরজা দিয়ে হাওয়া খেলে যায়, আলো ঢুকে পড়ে—যেন প্রাকৃতিক পরিবেশই এই স্কুলের আসল সৌন্দর্য। এই ভবনে কোনো বিদ্যুৎবাতি বা কৃত্রিম আলো প্রয়োজন হয় না দিনের বেলায়।

তবে আজ সেই ঐতিহাসিক ভবনটি মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ভবনের দেয়ালে দেখা দিয়েছে ফাটল, ছাদ থেকে খসে পড়ছে চুন-সুরকির পলেস্তারা। বৃষ্টি হলে শ্রেণিকক্ষে পানি পড়ে, ছাত্রছাত্রীদের বসার জায়গা থাকে না। সব মিলিয়ে প্রতিনিয়ত আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তার মধ্যেই চলছে পাঠদান।

প্রধান শিক্ষক মো. মিয়া চান বলেন, “প্রতিষ্ঠাকালীন মূল ভবনটিই এখনও বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু এখন এটি একেবারেই জরাজীর্ণ। বিজ্ঞানাগার, কম্পিউটার ল্যাব, শ্রেণিকক্ষ—সব কিছুই ব্যবহারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।”

প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন ক্লাস করছে। শিক্ষক ও অভিভাবকদের মাঝে আতঙ্ক তো রয়েছেই, তার চেয়েও বড় বিষয় হচ্ছে—এই শিক্ষালয় যদি আর না টেকে, তাহলে হারিয়ে যাবে একটি ইতিহাস।

টাঙ্গাইল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইশতিয়াক ইকবাল হিমেল জানান, “বিদ্যালয়টি মেরামত ও সংস্কারের জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। এখন অনুমোদনের অপেক্ষা।”

এলাকাবাসীর একটাই দাবি—এই ঐতিহ্য হারানোর আগেই যেন বিদ্যালয়টির জরুরি ভিত্তিতে পূর্ণাঙ্গ সংস্কার করা হয়। শুধু নতুন প্রজন্ম নয়, ইতিহাসও বেঁচে থাকবে এই বিদ্যালয়ের সাথে।