অনলাইন ডেস্ক :
ফারুক মাহফুজ আনাম জেমস। আজ সোমবার এই কিংবদন্তির ৫৯তম জন্মদিন। শৈশবেই গানের ভাবনা মগজে ধরে তার। তবে অধিকাংশের মতো তার বাবা-মাও ছেলের এমন ইচ্ছায় সায় দেননি। কিন্তু তাই বলে স্বপ্নের জলাঞ্জলি দিতে নারাজ ছিলেন তিনি। তাই গানের জন্য ছেড়ে দেন ঘরই। গিয়ে ওঠেন চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিংয়ে। সেখানেই তার গানের জগৎ প্রসারিত হয় ক্রমশ। হয়ে ওঠেন নগর বাউল। একটা সময় গান দিয়ে জনপ্রিয়তা, খ্যাতি সবই আসে তার। এমনকি দেশের সীমান্ত ছাড়িয়ে তার জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে যায় আন্তর্জাতিক পরিম-লে।
২০০৫ সালে উপমহাদেশের বৃহত্তম সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি বলিউডে ডাক পান। সেখানে গান করেও নিজেকে প্রমাণ করেন। তার কণ্ঠে হিন্দি গানগুলো তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, বলিউডে স্থায়ী হননি তিনি। কেন? কারণ বলিউডের জন্য তাকে মুম্বাইতে স্থায়ী আবাস গড়তে হতো। আর দেশ তথা ঘর ছেড়ে তিনি পরবাসী হতে চাননি। তাই তো অকপটে বলেছিলেন, ‘বলিউডে তখন ক্যারিয়ার গড়তে পারতাম। খুব সহজ ছিল। কিন্তু সেখানে স্থায়ী হলে আমাকে বাংলাদেশটা ছাড়তে হতো। যেটা আমাকে দিয়ে সম্ভব নয়। আরও বড় প্রলোভন দিলেও দেশ আমি ছাড়তে প্রস্তুত নই।
তাই আর বলিউডে কনটিনিউ করা হয়নি।’ হিন্দি গান তার ক্যারিয়ারে একটি অধ্যায় যুক্ত করেছে বটে, কিন্তু শুধু বাংলা গান বিবেচনা করলেও তিনি দেশের সবচেয়ে অন্যতম সফল তারকা। অনেকের মতে, বাংলা গানের সত্যিকার অর্থের সুপারস্টার তিনি। সহজে যার নাগাল পাওয়া যায় না, কেবল তার কাজে মুগ্ধতা নিয়ে ডুবে থাকা যায়। তারই প্রতিচ্ছবি মেলে জন্মদিন এলে। এই দিনটিকে তিনি কখনোই আলাদা করে ভাবেন না। অংশ নেন না তাকে ঘিরে কোনো বিশেষ আয়োজনে। বড়জোর ঘরের ও দলের মানুষগুলোর সঙ্গে বসে ছোট্ট একটা কেক কাটেন। তাতেও তার বেজায় অস্বস্তি।
তাই তো এবারও সোমবার বিশেষ দিনটি রকগুরু কাটান নিজ ঘরেই। ডুবে যান নিজস্ব প্র্যাকটিস প্যাডে। কারণ, ৫ অক্টোবর বসুন্ধরায় অবস্থিত আইসিসিবি নবরাত্রি হলে নগর বাউল জেমস পারফর্ম করবেন মেগা রক ইভেন্ট ‘দ্য হাইব্রিড এক্সপেরিয়েন্স ২’ কনসার্ট-এ। এছাড়াও দেশের বাইরে আরও কিছু শো রয়েছে সম্প্রতি। মূলত সেগুলোর প্রস্তুতি নিবিড়ভাবে নিচ্ছেন এই রকস্টার। গানের মঞ্চে নিজেকে পারফেক্ট রাখার জন্য প্র্যাকটিস প্যাডে এখনও তার যে ডেডিকেশন, সেটি উল্লেখযোগ্য বটে। জানা গেছে, বরাবরের মতো এদিনও দেশ-বিদেশে তার ভক্তরা জন্মদিন উদযাপন করবেন নানা আয়োজনে।
সেসব তিনি সোশ্যাল হ্যান্ডেল ও সংবাদমাধ্যমে দেখেন এবং ভালো অনুভব করেন। এবারও তিনি আগ্রহ নিয়ে সেসব ফলো করবেন। জানান, নগর বাউল ব্যবস্থাপক রুবাইয়াৎ ঠাকুর রবিন। যথারীতি এবারের জন্মদিনেও সংবাদমাধ্যমের এর মাধ্যমে জেমস তার ভক্তদের উদ্দেশে একটি বিশেষ বার্তা দিয়েছেন। সেটি হলো, ‘ভালোবাসো, ভালোবেসে যাও।’ এবার খানিকটা পেছনে তাকানো যাক। গানের ভুবনে জেমসের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ১৯৮০ সালে ‘ফিলিংস’ ব্যান্ড গঠনের মাধ্যমে। সাত বছর পর এই ব্যান্ডের হয়ে প্রথম অ্যালবাম ‘স্টেশন রোড’ প্রকাশ করেন। এর কিছু গান দারুণ সাড়া পায়। পরের বছর ‘অনন্যা’ শীর্ষক একটি একক অ্যালবাম নিয়ে আসেন তিনি। যা তাকে সংগীত ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতিষ্ঠিত করে। ‘ফিলিংস’ ব্যান্ড থেকে তিনি আরও উপহার দিয়েছেন ‘জেল থেকে বলছি’, ‘নগর বাউল’, ‘লেইস ফিতা লেইস’, ‘কালেকশন অব ফিলিংস’ অ্যালবামগুলো।
পরবর্তীতে এটি ভেঙে নতুন ব্যান্ড ‘নগর বাউল’ গঠন করেন তিনি। সেই থেকে তিনিও শ্রোতাদের কাছে নগর বাউল নামেই পরিচিত। এই ব্যান্ড অবশ্য মাত্র দুটি অ্যালবাম ‘দুষ্টু ছেলের দল’ এবং ‘বিজলি’ উপহার দিয়েছে। তবে একক অ্যালবাম হিসেবে তিনি প্রকাশ করেছেন ‘দুঃখিনী দুঃখ করো না’, ‘ঠিক আছে বন্ধু’, ‘আমি তোমাদেরই লোক’, ‘জনতা এক্সপ্রেস’, ‘তুফান’ এবং সর্বশেষ ‘কাল যমুনা’। তার কণ্ঠে জনপ্রিয়তার আকাশ ছোঁয়া গানগুলোর মধ্যে রয়েছে-‘দুঃখিনী দুঃখ করো না’, ‘কবিতা’, ‘পাগলা হাওয়ার তরে’, ‘গুরু ঘর বানাইলা কী দিয়া’, ‘বাবা কত দিন দেখি না তোমায়’, ‘মা’, ‘কাল যমুনা’, ‘কুসুম কুসুম প্রেম’, ‘মীরাবাঈ’, ‘আসবার কালে আসলাম একা’, ‘তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম, ‘আমার সোনার বাংলা’, ‘এক নদী যমুনা’ ইত্যাদি। গানের আড়ালে তার আরেকটি অনন্য প্রতিভা রয়েছে-ফটোগ্রাফি।
দুর্দান্ত সব স্থিরচিত্র ধারণ করেন ক্যামেরায়। ফুল-প্রকৃতির পাশাপাশি তার ক্যামেরায় ব্যতিক্রম রূপে ধরা দিয়েছেন দেশের জনপ্রিয় কয়েকজন তারকাও। তবে এই ফটোগ্রাফি নিয়ে তার আলাদা কোনো ভাবনা-চিন্তা নেই। কেবল একান্ত মনের ভালোলাগা থেকেই কাজটি করেন বলে জানিয়েছিলেন। সংগীত তাকে দিয়েছে দু’হাত ভরে। আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা উপভোগ করছেন এখনও। এর পাশাপাশি দুইবার শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও ঘরে তুলেছেন।
আরও পড়ুন
দীর্ঘদিন পর ফেরা তারকারা
ভিন্ন পরিচয়ে রিচি
বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যা বললেন শান